একটা সহজ অংক, কিন্তু কেমন করে জানি গোলমাল করে ফেলেছি। একটু হেল্প করেন আমাকে। সাধারণ যোগ বিয়োগ তাও মিলছে না।
আমার রমজানের এজেন্ডা **************************
1.
রমজান, সারাদিন খাইনি, তাই ভালো ভালো, দামী দামী খাবার খাবো সন্ধ্যায়। আল হামদু লিল্লাহ।
2.
পবিত্র মাস, সবার সাথে এক হয়ে প্রায়ই কেনা খাবার দাম দিয়ে
দোকান থেকে এনে খাওয়া মন্দ নয়। রমজান বলে কথা। টাকাতো আমিই দিবো। সুবাহান আল্লাহ।
3.
মাহে রমজানের ফজিলত বোঝার জন্যে মাঝে সাঝে ইফতার আর সেহরী খেতে লম্বা লাইন দিবো রেস্টুরেন্ট। তার জন্যে যদি চাঁদাবাজি, চিটিংবাজি, ধান্দাবাজি করতে হয়, ওটা কোন বিষয় না। রমজান, কথা কম, কাজ বেশি। আফটারঅল ইফতার পার্টিতো করছি পুলসিরাত পার হবার মহৎ উদ্দেশ্যেই। মা শাহ আল্লাহ।
4.
একটু ভালো মন্দ না খেলে, দোকানদার, ইমপোরটারের লাভ হবে নাতো। তাতে যদি গরীব মানুষের ক্রয়ের সাধ্যের বাইরেও চলে যায় দ্রব্য মূল্য বাকি এগারোটা মাস, তাতে সমস্যা কি, আমিতো তিরিশ রোজাই করেছি। আল্লাহ হু আকবার।
5.
রিজিক উপরওয়ালার হাতে। উনি আমাকে টাকা দিয়েছেন কারন আমি দামী ওয়ালেট ব্যবহার করি। ফকিরের মানি ব্যাগ নাই তাই দেয়নি। তাই ওর সামনে দিয়েই আমি আতর মেখে রেস্টুরেন্ট আর শপিং মলে ঢুকবো। ফি আমান ইল্লাহ।
6.
একটু বাড়তি শপিংতো করতেই হবে। সারাটা মাস পরিবারে সবাই না খেয়েই তো থাকলাম। আই মিন, তিন বেলাই খেলাম শুধু টাইমিংটা বদলে নিয়ে। বিনিময়ে শপিংতো মাস্ট। ভাই আমিতো নাদান না। পরিবার অগ্রগন্য। “লা রুহ বানিআতা ফিল ইসলাম” … ইসলাম সংসার ত্যাগী বৈরাগ্য সাধনাকে সমর্থন করে না যে।
7.
ও হ্যাঁ যাকাতটাও দিবো। তবে একটু হিসেব করে দেখি গহনা গুলোতে খাদ কতটা মেশানো। এটাতো আর সোনার দোকানে বদল করছি না যে, জেনে শুনেও 24 ক্যারেট বলে প্রমাণ করতে ঝগরা করবো। ইচ্ছাকৃত শোধ না করা লোনও আছে প্রচুর। সব নিয়ে বসে তারপর না বার করতে হবে আদতে আমার যাকাত জায়েজ কিনা। ফাঁকি দিচ্ছি না রে ভাই। আসতাগ ফি রুল্লাহ।
8.
আহা, আমি রোজা করে কত্ত কত্ত পূন্য নিয়ে নিচ্ছি কিন্তু ঐ অন্য ধর্মের ওরা অকারনেই বেশি দামে বাজার থেকে জিনিষ কিনছে রোজা বলে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বেচারারা রোজার পূন্যও পেলো না কিন্ত আমার কারনে বাড়তি টাকা খরচ করলো। আসলে, মুসলিম বলে আমায় খুব ভালোবাসে ওরা। আমীন, আমীন।
9.
নামাজ কিন্তু একদম ছাড়ছি না এই মাসে। এগারো মাস করিনিতো কি হয়ছে, এই মাসে বোনাস দিবেন আল্লাহ, তাই বেশি বেশি ইবাদাত করবো। যদিও বাকি এগারো মাসও সেইম আল্লাহই ছিল। একটু বুদ্ধিমান না হলে কি হয়। ‘ইকরা’ পড়, মানে জ্ঞান অর্জন। তাইতো করছি।
10.
টাকা পয়সা বুঝে খরচ করতে হবে। সামনে ঈদ আসছে। তাই এবার ওয়ার্কারদের বেতনটা দিতে হয়তো পারবো, তবে বোনাস হবে না। ব্যবসা কই রে ভাই। ব্যবসাই তো নাই। রমজানে কি আর বানিজ্য হয়। আল্লাহ বিল্লাহ করতেই তো সময় পার হয়ে যাচ্ছে। বেতন বোনাস নিয়ে এত অস্তির হলে হয়। আল্লাহ ধৈর্য্যশীলকে পছন্দ করেন।
এই হলো আমার অবস্থা। কেন জানি মনে হচ্ছে, যে মাসটায় পরিচ্ছন্ন হবার কথা আমার, উল্টো বেশি নোংরা হচ্ছি সে মাসেই অবুঝের মত। কেউ কি একটু যোগ বিয়োগ করে আমাকে সরল অংকটা করে বলবেন যে, এটা ফলো করলে আমার সিয়াম সাধনা কমপ্লিট হবে কিনা। আর এর ফলাফল কি ডান কাঁধে কিরামীন নাকি বা কাঁধে কাতিবীন লিখবেন। যদি পারেন। না পারলে, পড়েন।
রাসুল সাঃ হাদিসে আছে, রোজ হাসরের ময়দানে, সবচেয়ে বড় দেউলিয়া ঐ ব্যক্তি, যার আমলনামা ভর্তি শুধু নামাজ রোজা হজ যাকাত, অথচ সবই আল্লাহপাক নিয়ে বঞ্চিতদের দিয়ে দেবেন। এমন কি ওদের পাপগুলো এই লোকের আমলনামায় ঢোকাবেন।
পড়া শেষ। আর কি, ধন্যবাদ।
thank you.
রিয়াজ রব্বানী। টরেন্টো। ২০২০